অর্জুন গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা
অর্জুন গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। অর্জুন গাছ নামটি সাথে তো আমরা সবাই পরিচিত অনেকেই হয়তো জানি আবার অনেকেই হয়তো গাছটি সম্পর্কে জানি না। অর্জুন গাছ(terminalia Arjuna) এটি ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত। অর্জুন গাছের বিভিন্ন অংশ স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যবহার করা হয়। এর ছাল ফল পাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রোগ প্রতিকারের কাজে। তাহলে চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে আসি।পেজ সূচিপত্রঃ অর্জুন গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা
- অর্জুন গাছের কি উপকারিতা আছে
- অর্জুন ছালের অপকারিতা
- অর্জুন গাছ কোথায় পাওয়া যায়
- অর্জুন গাছের অপর নাম কি
- অর্জুনের ছালের গুড়া তৈরির নিয়ম
- অর্জুনের ছালের গুড়া খাওয়ার নিয়ম
- অর্জুন গাছের ফলের উপকারিতা
- অর্জুন গাছের পাতার উপকারিতা
- সতর্কতা অবলম্বন
- আমাদের পরামর্শ
অর্জুন গাছের কি উপকারিতা আছে
হ্যাঁ, অর্জুন গাছের উপকারিতা আছে অসীম যা বলে শেষ করার মত নয়। অর্জুন গাছ নানা রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় যেমন হৃদরোগের চিকিৎসায়, পেটের হজমের সমস্যা নিরাময়ে, লিভারের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি তে, ব্যথা নিরাময়ে, ত্বকের যত্নে, শ্বাসতন্ত্রের স্বাস্থ্যে ব্যবহৃত হয় অর্জুন গাছের ছাল পাতা ও ফল। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুন অর্জন গাছের ছাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুনে গুণান্বিত।
এটি ফ্রি রেডিক্যাল প্রতিরোধ করে এবং কোষের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। অর্জুন গাছের ছাল খেলে অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিসের মত রোগের চিকিৎসায় ভূমিকা পালন করে এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। অর্জুন গাছের ছাল ত্বকের বিভিন্ন রোগ যেমন রেস, এলার্জি এবং ব্যথার চিকিৎসা ব্যবহৃত হয়। অর্জুন গাছের ছাল লিভারে কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এটি হৃদ যন্ত্রের বেশি মজবুত করতে সাহায্য করে এবং হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখে। অর্জুন গাছের ছাল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অর্জুন গাছ একটি বহুমুখী ঔষধি গাছ যা হৃদরোগ, হজমের সমস্যা, প্রদাহ, ব্যথা, ত্বকের সমস্যা, শ্বাসতন্ত্রের রোগ শ্বাসকষ্টের রোগ, এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলোর কারণে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
অর্জুন ছালের অপকারিতা
অর্জুন গাছের ছালের যেমন উপকারিতা রয়েছে অনেক তেমনি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা ও রয়েছে। অতিরিক্ত সেবন বা কিছু ক্ষেত্রে অর্জুনের ছাল এর ব্যবহার নেতিবাচক প্রক্রিয়ার সৃষ্টি করে। আমরা উপরে জেনেছি অর্জুন গাছের ছাল রক্তচাপ কমায় এটি অনেক ভালো গুণ কিন্তু অতিরিক্ত অর্জুন গাছের ছাল সেবনে রক্তচাপ কমিয়ে নিম্ন রক্তচাপে পরিণত করতে পারে যা খুবই ভয়াবহ।
অতিরিক্ত সেবনে এটি রক্তচাপ অনেক কমিয়ে দিতে পারে। এটি হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ) সৃষ্টি করতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে যেমন মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা মূর্ছা যাওয়া হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী সেবনে অর্জুন সাল হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে অতিরিক্ত সেবনে ডায়রিয়া বমি বমি ভাব সৃষ্টি করতে পারে।
এটি এলার্জির জন্যও ক্ষতিকর কিছু মানুষের ত্বক অর্জুন সালের প্রতি সমবেদনশীল হতে পারে। যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যেমন ত্বকে র্যাশ, ফুসকুড়ি বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে।
অর্জুন গাছ কোথায় পাওয়া যায়
অর্জুন গাছ (Terminalia arjuna) প্রধানত দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার এবং নেপালসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। এছাড়াও, এই গাছটি বিশেষত নদী ও জলাভূমির আশেপাশে বৃদ্ধি পায়।
কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে অর্জুন গাছ পাওয়া যায়:
ভারত: অর্জুন গাছ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পাওয়া যায় যেমন বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ এবং কেরালাতে অর্জুন গাছ প্রচুর দেখা যায়।
বাংলাদেশ: অর্জুন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায় বিশেষত সিলেটে অর্জুন গাছ বেশি পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম এবং সুন্দরবন এলাকাতেও অর্জুন গাছ পাওয়া যায়। আর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম বেশি অর্জুন গাছের দেখা মেলে।
শ্রীলংকা: শ্রীলঙ্কার কিছু কিছু অঞ্চলে অর্জুন গাছের দেখা মেলে।
মায়ানমার এবং নেপাল: এই দুই দেশে অর্জুন গাছের সংখ্যা খুবই সীমিত আকারে আছে যা মাঝে মাঝে দেখা মিলে খুব কষ্টে।
অর্জুন গাছ তার ঔষধি গুনের কারণেই মানুষের কাছে পরিচিত এটি প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় প্রচুর ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
অর্জুন গাছের অপর নাম কি
অর্জুনের ছালের গুড়া তৈরির নিয়ম
অর্জুন গাছের ছাল থেকে গুঁড়া তৈরি করার প্রক্রিয়াটি সহজ এবং ঘরে বসেই করা
যায়। এখানে অর্জুন ছালের গুঁড়া তৈরির ধাপগুলো তুলে ধরা হলো:
উপকরণ:
তাজা অর্জুন গাছের ছাল
ছুরি বা কাঁচি
শুকানোর জন্য পরিষ্কার
স্থান
গ্রাইন্ডার বা ব্লেন্ডার
বায়ুরোধক কন্টেইনার
প্রস্তুতি:
ছাল ধোয়া: ছালগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন যাতে সব ময়লা ও ধূলা দূর হয়ে যায়।
শুকানো: ছালগুলো পরিষ্কার কাপড়ে রেখে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। এটি সম্পূর্ণ শুকানো জরুরি, যাতে ছালের আর্দ্রতা সম্পূর্ণভাবে দূর হয়।এটি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে ছালটি খসখসে হবে।
গুঁড়ো করা: ছালের গুঁড়া করার পর একটি চালনী দিয়ে ছেকে মিহি গুঁড়া তৈরি করুন।
সংরক্ষণ:তৈরি করা অর্জুন ছালের গুঁড়া একটি বায়ুরোধক কন্টেইনারে সংরক্ষণ করুন। এটি শুকনো ও ঠান্ডা স্থানে রাখুন, যাতে গুঁড়া দীর্ঘ সময় ধরে ভালো থাকে।
গ্রাইন্ডিং: ছাল সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে এগুলো ছোট ছোট টুকরো করে নিন। এরপর গ্রাইন্ডার বা ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালোভাবে গুঁড়া করুন।অর্জুন ছাল থেকে গুঁড়া তৈরি করা সহজ এবং ঘরে বসেই করা যায়। এই গুঁড়া বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতিকারে ব্যবহৃত হতে পারে। সঠিকভাবে তৈরি ও সংরক্ষণ করলে এটি দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ থাকে।
অর্জুনের ছালের গুড়া খাওয়ার নিয়ম
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে সেবন করুন:
আপনার স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শে অর্জুন ছালের গুড়া সেবন করুন সঠিক মাত্রা এবং সময় অনুযায়ী সেবন করুন এতে বেশি উপকার পাবেন এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাবেন। অর্জুন ছালের গুড়া একটি ঔষধি উপাদান যা হৃদরোগ হজমের সমস্যা ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক সঠিক নিয়ম অনুযায়ী এটি সেবন করলে আপনি অর্জুন সালের গুড়া সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে পারেন।
অর্জুন গাছের ফলের উপকারিতা
প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অর্জুন গাছের ফলের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
অর্জুন গাছের পাতার উপকারিতা
অর্জুন গাছের পাতার উপকারিতা রয়েছে অনেক অর্জুন গাছের পাতা, ছাল ও ফলের মতোই উপকারী এক কথায় বলতে গেলে অর্জুন গাছ পুরোটাই ঔষধি গুনে ভরপুর। অর্জুন গাছের পাতায় রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণ যা শরীর থেকে ফ্রি রেডিকেল দূর করতে সাহায্য করে এটি কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং বার্ধক্য রোধে সাহায্য করে।
অর্জুন গাছের পাতা গাছের ছাল এর মতই কাজ করে এটি হৃদযন্ত্রের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে। হজম শক্তি বৃদ্ধি, লিভারের যত্ন, ত্বকের যত্ন, প্রদাহ জনিত রোগ প্রতিরোধে, অর্জুন গাছের ছালের মতোই একই ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি মায়ের রক্তপাত বন্ধ করে। শরীরের ক্ষত খোস পড়া দেখা দিলে অর্জুনের ছাল পেটে লাগালে ভালো হয়ে যায়।
ওজনের বাকল থেকে হৃদরোগের ঔষধ পাতার রস আমাশয় রোগের ঔষধ বানানো হয়। অর্জুন গাছের পাতা রেশম পোকার খাদ্য।
আরো পড়ুনঃনিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
সতর্কতা অবলম্বন
অর্জুন গাছ যা একটি অত্যন্ত ঔষধি গুন সম্পন্ন একটি উদ্ভিদ তবে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা জরুরী। অর্জুন গাছের যেকোনো অংশ ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এটির অনেক উপকারিতা থাকলেও আবার এর অপকারিতা ও রয়েছে।একটি বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা স্তন্যদানকারী মহিলা এবং যারা দীর্ঘমেয়াদি কোন রোগে ভুগছেন তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অতিরিক্ত মাত্রায় অর্জুনের ছাল বা পাতা ব্যবহার করা যাবে না অতিরিক্ত সেবনের ফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে আপনার শরীরে অতিরিক্ত সেবনে রক্তচাপ কমে যায় হজমের সমস্যা ইত্যাদি তৈরি হয় রক্তচাপ বেশি কমে গেলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে এবং মৃত্যুর সম্মুখীন ও হতে পারেন আপনি তাই এটি ব্যবহারে পূর্বে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
আমাদের পরামর্শঃঅর্জুন গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা
অর্জুন গাছের ছাল ফল এবং পাতা উভয়ে ওষুধে গুণসম্পন্ন হলেও এর অতিরিক্ত ব্যবহার আপনার জন্য ক্ষতিকর প্রমাণ হতে পারে। তাই আমি মনে করি এটি অতিরিক্ত সেবন না করাই উত্তম তবে আপনার যদি অতিরিক্ত সেবন করা প্রয়োজন পড়ে তবে একটি আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা পরামর্শ গ্রহণ করে তারপর সেবন করবেন এতে আপনি এর সুফল ভোগ করতে পারবেন
এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চক্করে পড়বেন না এবং আপনার শরীর সুস্থ থাকবে নয়তো শরীর সুস্থ রাখতে গিয়ে উল্টো হতেও পারে তাই আমার পরামর্শ থাকবে আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরামর্শে অর্জুন গাছের ছাল পাতা ও ফল এর ঔষধি গুনাগুন ভোগ করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url