পৃথিবী সৃষ্টি থেকেই গাছের অনেক অবদান রয়েছে আমাদের মানবজাতির উপর।গাছ ছাড়া
আমরা বেঁচে থাকতে পারবো না গাছ আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে এবং গাছের
ছাল-বাকল, পাতার নির্যাস থেকে ঔষধ তৈরি করা হয়।
১৫টি ঔষধি গাছ ও তার উপকারিতা
তুলসী পাতাঃ
তুলসী পাতা যে উপকারী তা তো আমরা সবাই জানি। তবে তুলসী পাতা খেলে কি কি উপকার
হয় তা কিন্তু অনেকেরই অজানা। ঔষধ হিসেবে তুলসী পাতার ব্যবহার বেশ পুরনো। এই
পাতায় আছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এগুলো মারাত্মক সব
রোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। চলুন জেনে এসে কি কি রোগের বিরুদ্ধে
তুলসী পাতা লড়াই করতে পারে।
তুলসী পাতা মারাত্মক সব রোগের সাথে লড়াই করতে পারে যেমন
ক্যান্সার,ডায়াবেটিস,হৃদরোগ এরকম মারাত্মক রোগের সাথে তুলসী পাতা লড়াই করতে
পারে তবে বহুল প্রচলিত মানুষ এই পাতা ব্যবহার করে ঠান্ডা, কাশি, গলা ব্যথা এবং
শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে মানুষ এ পাতার ব্যবহার করে থাকে। তবে এটি কিন্তু ডায়াবেটিস
দূরে রাখতে সাহায্য করে কারণ তুলসী পাতা ইনসুলিন উপাদানের কাজ করে।
আপনারা ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে চাইলে প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসী
পাতা খেতে পারেন এতে রক্তের সুগার মাত্রা কমে। তুলসী পাতা এক ধরনের
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কাজ করে ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে।
নিম পাতাঃনিম পাতারও অনেক গুনা গুন আছে তুলসী পাতার মতোই। নিম পাতা
ব্যবহার হয় ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্য রক্ষায় যেমন মুখে একটা ব্রণ হলে বা ত্বকের
কোন সমস্যা হলে আমাদের দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়। এই দুশ্চিন্তায় একটা ব্রণের
জায়গা আমরা দু তিনটে ব্রণ বানিয়ে ফেলো অথচ হাতের কাছে প্রাকৃতিক উপাদানের নিম
পাতার ব্যবহার আমাদের জানা নেই নিম পাতা আমাদের ত্বকের ব্রণ নিরাময়ে অনেক
সাহায্য করে থাকো
নিম পাতা পিষের নিমপাতা মুখে লাগিয়ে দিলে এইভাবে কিছুদিন নিমপাতা মুখে লাগে
ব্যবহার করলে ব্রণ ভালো হয়ে যায়। নিম পাতা ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী তাই
ত্বকের সুরক্ষায় এর জুরি নেই। ব্রণের সংগ্রহন হলে নিম পাতা পিসে তা ভালোভাবে
মুখে লাগালে ভালো ফল নিশ্চিত। মাথার ত্বকে অনেক চুলকানি ভাব হয় এতে নিম পাতা
অনেক উপকারী।
শুধু চুলের নয় ত্বকের চুলকানিতেও নিমপাতা বেটে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
নিয়মিত নিম পাতার সাথে কাঁচা হলুদ মিক্স করে ত্বকে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল লতা
বৃদ্ধি করে। ইত্যাদি আরো অনেক কাজে নিম পাতার ব্যবহার হয়।
আদাঃআদা খাদ্যে ব্যবহৃত একটি পরিচিত উপাদান। এটি মূলত রান্নায় সাত বাড়াতে মসলা
হিসেবে বেশি ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি এর মধ্যে অনেক বিশেষ গুন আছে যেমন আদা
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, বমি বমি ভাব দূর করে এবং প্রদাহ নিরাময়ে সহায়ক গলা
ব্যথা করলে আদা চা খেলে স্বস্তি পাওয়া যায়। আদা খেলে আমাদের পেটের গ্যাস কমে।
অস্ত্রের বেশি শিথিল করে
আদার অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে, আদায় রয়েছে
পটাশিয়াম,আয়রন,ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম, ফসফরাস,সোডিয়াম,জিংক,
ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ই ও সি এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ও
আন্টি ইনফ্লেমেন্টরি উপাদান সহ ইত্যাদি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যা শরীরের অনেক
উপকার করে।
হলুদঃহলুদ প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ ও চৈনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে
সহস্ত্র বছর ধরে। স্বাস্থ্যকর ভেষজ হলুদকে কেউ কেউ ঔষধি বিশ্বাস নামে আখ্যায়িত
করেন। হলুদ ডায়াবেটিস কমায়,আর্থ্রাইটিসের ব্যাথা হ্রাস করে, ক্যান্সার ঠেকাতে
সাহায্য করে, ক্ষতসারাই, পিরিয়ডের সমস্যা দূর করে, মস্তিষ্কের হয় জনিত সমস্যা
রোধ করে, যকৃত সুরক্ষিত রাখে, মাথা যন্ত্রণা সারায়, হজম ক্ষমতা বাড় ইত্যাদি
আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে হলুদের।
লেবুঃলেবু পানি খাওয়ার ঠিক আগে খেলে ক্ষুধা বাগে আনে। লেবু পানিতে অম্লতা বেশি,
যা খাবার হজমের জন্য পেটকে প্রস্তুত করে এতে করে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয় না।
লেবুতে আছে অনেক সাইট্রিক এসিড, যা আমাদের পাকস্থলীতে হজমে সাহায্য করে।
খাওয়া দাওয়ার পরে লেবু পানি খেলে হজমের সাহায্য করে এতে আমাদের পেটের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। লেবু জামান খাবার আগে খেলে উপকার আছে তেমনি
খাবার পরে খেলেও উপকার আছে তাই লেবু খাওয়া উত্তম।
লেবু পানি খাওয়ার সঠিক কোন নিয়ম নেই চাহিদা মত যখন ইচ্ছা তখন খাওয়া যাবে তাই
আপনি আপনার জীবন যাপন ও শরীরের অবস্থা বুঝে লেবু পানি খেতে পারেন লেবু পানিতে
শরীরের ক্লান্তি দূর করে ভারী কাজ করার পরে লেবু পানি খাওয়া উত্তম এতে শরীরে
এনার্জি ফিরে আসে।
পুদিনা পাতাঃপুদিনা পাতাও লেবুর মত হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। শ্বাসকষ্ট
নিরাময় এবং ঠান্ডা দূরীকরণে পুদিনা পাতার ব্যবহার অনিবার্য পুদিনা পাতা তুলসী
পাতার মতোই শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডা দূরীকরণে সাহায্য করে থাকে। পুদিনা পাতায়
উচ্চমাত্রায় শেলীশাইলিক এসিড থাকে যা ব্রণ দূর করে ত্বক পরিষ্কার করতেও একটি
বেশ কার্যকর। মৃত কোষ দূর করে এবং কড়া পোড়া অংশ স্বাভাবিক করতে পুদিনা পাতা
ভালো কাজে দেয়। দাঁত ও মাড়ি ব্যথায় ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কাজে পুদিনা
পাতা আদর্শ উপাদান।
থানকুনিঃথানকুনি একটি জনপ্রিয় খাবার উপাদান হলেও এটি ঔষধে গুণসম্পন্ন একটি উদ্ভিদ।
তাহলে চলুন জেনে আসি এর উপকারিতা সম্পর্কে। থানকুনি পেটের নানা সমস্যা
প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী একটি উপাদান, থানকুনি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে বেশ কার্যকরী,
কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী এটি, চুল পড়া কমাতে এবং ত্বকের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে, থানকুনি বিভিন্ন ধরনের ক্ষত নিরাময়ে
ব্যবহার হয় এই ওষুধ।
দূর্বা ঘাসঃদূর্বা ঘাসের রাস্তাঘাটে অবাধ বিচরণ থাকলেও এর রচনাধরনের
ঔষধি গুন। সেই প্রাচীনকাল থেকেও হাত পা কেটে গেলে দুর্বল ঘাস ব্যবহার করা হয়।
হাত পা কেটে গেলে রক্ত বন্ধ করতে দুর্বাসের ব্যবহার হয় প্রাথমিক চিকিৎসা
হিসেবে। দূর্বা ঘাস রক্তক্ষরণ প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী। এই ঘাসের চর্মরোগ
প্রতিরোধে ভূমিকা অত্যাধিক। এন্টিঅক্সিডেন্ট সম্পন্ন এই ঘাস রূপচর্চার ক্ষেত্রে
বেহতে হয়ে আসছে।
লজ্জাবতীঃলজ্জাবতি এক ধরনের ছোট পাতার কাঁটাওয়ালা গাছ । এই গাছে হাত বুলালেই গাছটির
পাতা এক জায়গায় হয়ে যাই যেন সে লজ্জা পেয়েছে। এই গাছের ভিতর সাদা কিংবা
গোলাপী ফুল হয় তাকে আমরা লজ্জাবতী হিসেবে চিনে থাকি। তবে এই ফুল শুধুমাত্র
জংলি ফুল হিসেবে খেতে তা কিন্তু নয়। এই গাছেরও রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। লজ্জাবতী
গাছ ডায়রিয়া রোগ উপশমে বেশ কার্যকর। হাত পায়ে বিভিন্ন ঘা নিরাময় কার্যকর
ভূমিকা পালন করে এই গাছটি। আমাশয় কিংবা হাত-পায়ের জ্বালা ভাব প্রতিরোধে এই
গাছের ব্যবহার রয়েছে।
জবাঃজবা শুধুমাত্র একটা ফুল গাছ হিসেবে বিবেচনা করলে ভুল হবে। বরং এই গাছ ঔষধি গাছ
হিসেবে বেশ কার্যকরী। জবা ফুলের অনেক উপকারিতা রয়েছে পেট খারাপ নিরাময় এই
জবাব বেশী উপকারী। জন্ডিস প্রশমনে এই গাছ বেশ কার্যকরী। নারীদের রাজ: চক্রের
সমস্যার সমাধানে এবং সাফ জনিত সমস্যায় এই গাছ বেশ কার্যকরী।
অর্জুনঃঅর্জুন মূলত একটি বনাজি গাছ তা আমরা সবাই জানি। অর্জুন গাছের মূল, কান্ড, লতা,
পাতা, ফুল, ফল সব কিছুই খুব উপকারী।অর্জুন হৃদরোগের ব্যথা তো সমানে বেশ কার্যকর
এই ঔষধ, যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশ কার্যকর এই ঔষধি গাছ, মচকে যাওয়া কিংবা
হাড়ের ব্যথা প্রশমনে বেশ কার্যকরী বৃক্ষ।
পাথরকুচিঃপাথরকুচি ঘরে শোভাবর্ধনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় কিন্তু পাথরকুচির ঔষধের গুনা
গুন সম্পর্কে আমরা কয়েকজন জানি? পাথরকুচি রয়েছে অনেক ওষধি গুনা গুন।পাথরকুচির
উপকারিতা অনেক যেমন জ্বর কিংবা পেট ফাঁপার মত সমস্যায় বেশ কার্যকরী এই
পাথরকুচি উদ্ভিদ আবার চামড়া এলার্জির জন্য এটি খাওয়া উচিত এতে এলার্জি
নিরাময় হয়ে থাকে ঠান্ডা যন্ত্র সমস্যা যেমন সর্দি কাশি গলা ব্যথা শ্বাসকষ্ট
ইত্যাদি জনিত সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকরী এই পাথরকুচি উদ্ভিদ।
ধনিয়াঃধনিয়া খাবার স্বাদ বৃদ্ধিতে মসলা হিসেবে কাজ করলেও এর রয়েছে অনেক ওষুধই গুণ।
ধনিয়া তে রয়েছে রয়েছে ভিটামিন সি, খনিজ, ক্যালসিয়াম, আন্টি-অক্সিডেন্ট,
ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, আমিষ, ভিটামিন বি ভিটামিন এ ভিটামিন কে
ইত্যাদি উপাদানের সমৃদ্ধ তাই দুনিয়ার বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে হৃদরোগ পেট
ব্যথা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধাশ রক্তে শর্করার মাত্রার বদহজম থেকে মুক্তি মেলে।
বনজুইঃবনজুই কে সবাই জংলি ফুল হিসেবে চিনলেও এ ফুলের রয়েছে ঔষধি
গুনাগুন এই বনজুই ফুল কৃমি নাশক কিংবা ডায়রিয়া প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী ভূমিকা
পালন করে। চর্মরোগ প্রতিরোধেও এটি ব্যবহৃত হয় এটি চর্মরোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে
মালিশ করে ব্যবহার করতে হয় এতে চর্ম রোগ প্রতিরোধে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
বন ধনেঃবন ধনে এটি ধনে মসলার মত দেখতে হলেও এটি জংলি গাছ তবে এটি বনজ ফুল
হিসেবে বিখ্যাত হলেও এই গাছ নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী।
পেটে ব্যথা প্রশমনে অনেক কার্যকরী। ডায়রিয়া হলে এই গাছ খেলে ডায়রিয়া
প্রতিরোধে এই গাছ কার্যকর ফলাফল দেয়। এমনকি বিভিন্ন ধরনের ঘা প্রতিরোধেও বেশ
কার্যকরী এই ওষুধ।
শেষ কথাঃ ১৫টি ঔষধি গাছ ও তার উপকারিতা
উপরে যে ১৫ টি গাছ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এগুলো সবই প্রাথমিক চিকিৎসা
হিসেবে কার্যকর যে কোন রোগের প্রতিরোধক হিসেবে এসব কাজ খুবই কার্যকরী আমি মনে
করি প্রথম অবস্থায় এসব গাছ ব্যবহার করে রোগ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা উত্তম
কারণ সব সময় ফার্মেসি র ওষুধ খেলে শরীরের অনেক ক্ষতি হয় তবে এসব গাছ-গাছড়ার
ওষুধ খেলে শরীরে তেমন ক্ষতি হয় না আরো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
তাই আশা করি আপনারা প্রাথমিক অবস্থায় গাছ-গাছড়ার ঔষধ ব্যবহার করবেন।
খুব সুন্দর ❤